প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হয় ? |
সত্যি কথা বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাসটা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। আব্বু আম্মু তাগাদা দিতেন। যতদূর মনে পড়ে, স্কুল জীবন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের ফিকির ছিল। হয়তো দ্বীনের সঠিক বুঝ ছিল না, সে কারণে নামাজ কাজা হতো প্রায়ই। আলহামদুলিল্লাহ দ্বীনের বুঝ আসার পর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতের সঙ্গে আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, যেখানেই থাকি না কেন। তবে কোন সিরিয়াস ওজর থাকলে, বা মিস হয়ে গেলে নিজে নিজে আদায় করে নিই।সাধারণত এক্সট্রিম ওজর ছাড়া নামায কাজা হয় না। দিনের বেশিরভাগ সময়ই মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য জায়গায় থাকা হয়। যেখানেই থাকি না কেন জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। কাযা হয়না বললেই চলে। |
নিয়মিত নামায কত সময় যাবত পড়ছেন? (Required) |
ছোটবেলা থেকেই নামাজ-কালাম আদায়ের ফিকির ছিলো। কাযা হতো প্রায়ই। তবে দ্বীনি বুঝ আসার পর থেকে এবং পরিপূর্ণভাবে দ্বীন মেনে চলার সময় থেকে নিয়মিত সালাত আদায় করি। (আনুমানিক আড়াই বছর) |
মাহরাম/গাইরে-মাহরাম মেনে চলেন কি? |
আলহামদুলিল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। দ্বীনের বুঝ আসার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিতনাময় পরিবেশেও মাহরাম মেনে চলার চেষ্টা করি। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার অশেষ রহমতে আমার নত করে রাখা দৃষ্টি এবং এই আমলটাই আমাকে দ্বীনের পথে টিকিয়ে রেখেছে বহুগুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপ প্রেজেন্টেশনের সময় ভীষণ কষ্ট হয়। তবে আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবর্তনটাকে আমার ক্লাসের বন্ধুরা এবং শিক্ষকরা খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তারা সহযোগিতা করেন। জীবনের প্রতি মুহূর্তেই মাহরাম মানার ব্যাপারে আমি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকি আলহামদুলিল্লাহ। |
শুদ্ধভাবে কুরআন তিলওয়াত করতে পারেন? |
এ ব্যাপারেও আমার মায়ের ভূমিকা ছিল অমূল্য। ছোটবেলাতেই আমাকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন শিখানোর ব্যাপারে আমার মায়ের আগ্রহ ছিল ভীষণ। আম্মুর তত্ত্বাবধানেই এলাকার এক হাফেজ ভাইয়ের কাছে কোরআন শেখা। আলহামদুলিল্লাহ এখন বিশুদ্ধ উচ্চারণে তাজউইদ সহ পবিত্র কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করার চেষ্টা করি। তবে দ্বীনি ইলমের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার পর থেকে বুঝতে পেরেছি আধুনিক তাজউইদে আরো বেশি সময় দেয়া প্রয়োজন। বর্তমানে হিফজ করার নিয়তে উস্তায হাফেজ ক্বারী আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআনুল কারীম শেখার নতুন যাত্রায় রয়েছি। |
ঘরের বাহিরে সাধারণত কী ধরণের পোশাক পরেন? |
ঘরের বাইরে সাধারনত জুব্বা পড়া হয়। পাগড়িও পরিধান করি মাঝে মাঝে। এই পোশাকগুলোতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পোশাকগুলো এলাউ করে না, সে কারণে ভার্সিটিতে শার্ট প্যান্ট পড়ে যেতে হয় বাধ্য হয়ে। কিন্তু টুপিটা সবসময়ই পরার চেষ্টা করি; ইউনিভার্সিটিতেও। আগে পাঞ্জাবি পড়তাম। এখন পাঞ্জাবিও পড়া হয় না। জুব্বাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টুকু ছাড়া জুব্বাই পড়া হয় সবসময়। |
কোনো রাজনৈতিক দর্শন থাকলে লিখুন (Required) |
খিলাফাহ । প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে ঘৃণা করি। |
নাটক/সিনেমা/সিরিয়াল/গান/খেলা এসব দেখেন বা শুনেন? |
আমি সচেতনভাবে নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল বা গান দেখা ও শোনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই আমার সময় ও অন্তর সংরক্ষিত থাকুক শুধুমাত্র রবের জন্য। তবে কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করার সময় হঠাৎ কোন দৃশ্য সামনে এলে তা উপেক্ষা করে দ্রুত এড়িয়ে যাই। সময় যেন বরকতময় ও উপকারী কাজে ব্যয় হয় এটাই আমার চেষ্টা, ইন শা আল্লাহ। |
মানসিক বা শারীরিক কোনো রোগ আছে কি? (Required) |
না। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর "সুস্থতা"র নিয়ামত দান করেছেন। তবে গত বছর স্কিন ইনফেকশন হওয়ার কারণে পায়ে কিছু ছোট ছোট দাগ রয়ে গেছে। ইন-শা-আল্লাহ খুব দ্রুত মিশে যাবে। |
দ্বীনের কোন বিশেষ মেহনতে যুক্ত আছেন? (Required) |
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে দ্বীনের সঠিক বুঝ লাভ করার পর থেকে দ্বীনি মেহনতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। এই পথচলায় বই পড়ার মাধ্যমে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আমাদের ক্যাম্পাসের দ্বীনী কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে যা 'বিইউপি কুরআন লাভার্স' নামে পরিচিত, যেখানে আমরা সবাই মিলে দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছি, আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষত, মিডিয়া নিয়ে কাজের জায়গা থেকে আমাদের মধ্যে দাওয়াহর মেহনতকে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়, সে বিষয়ে ফিকির চলছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং আমাদের মাধ্যমে দ্বীনের কাজ আরও বিস্তৃত হোক-আমিন। |
আপনি কি কোনো পীরের মুরিদ বা অনুসারী ? (Required) |
না। তবে তাকওয়াবান হক্কানী আলেম ওলামার সোহবতে থাকতে পছন্দ করি । |
মাজার সম্পর্কে আপনার ধারণা বা বিশ্বাস কি? (Required) |
একটা কবর বৈ কিছু না |
আপনার পছন্দের অন্তত ৩ টি ইসলামী বই এর নাম লিখুন (Required) |
১. রেইনড্রপস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত "সীরাহ মুহাম্মাদ সা:" (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড) আমার অন্যতম পছন্দের একটা সীরাহ। আশেপাশের মানুষদেরও এই বইটি পড়ার ব্যাপারে নসিহা করি। আমার প্রাণের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-কর্ম বোঝার জন্য সহজ বাংলায় লেখা দারুন একটা কিতাব। ২. ইমাম তিরমিযী (র) এর লেখা "শামায়িলুন নবী"। আমার অত্যন্ত পছন্দের কিতাব। খুব সাধ জাগে, ইশ! যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো দেখতে পেতাম! হোক না স্বপ্নে! কেমন ছিলেন তিনি? কেমন ছিল তাঁহার কেশ! কেমন ছিল তাঁহার শারীরিক গঠন! এই কিতাবে দেয়া আছে তারই বিস্তর বর্ণনা। বইটি আমি আগ্রহ নিয়ে বারবার পড়ি। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুরত, তার চলার পদ্ধতি, খাওয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করি। ৩. "তাদাব্বুরে কুরআন" আমার অন্যতম পছন্দের একটা কিতাব। কুরআনের 114 টা সূরা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উৎস এবং তাফসির রয়েছে। জেনারেল থেকে আসা গবেষণা ও ইলম অর্জনে আগ্রহী ছাত্রদের জন্য খুবই কার্যকর একটি কিতাব। এছাড়াও আমার বই পড়ার অভ্যাস প্রচুর। প্রতি মাসে অন্তত চারটি বই পড়ার চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। কখনো কখনো চারটি শেষ করতে পারি, আবার কখনো দুটো। কিন্তু বই পড়া হয় ভীষণ। |
আপনার পছন্দের অন্তত ৩ জন আলেমের নাম লিখুন (Required) |
১. হযরত মাওলানা মুফতী মুহামম্মদ ইয়াহইয়া সাহেব দামাত বারাকাতুহুম। প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক: জামেআ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এবং মারকাজুল ফাতাওয়া আল ইসলামিয়া ঢাকা, প্রাক্তন উস্তাযুল ফিকহ: মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয় ঢাকা, খতিব: মোল্লা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিরপুর ১২, ঢাকা। ২. পাকিস্তানের মাওলানা তারিক জামিল হাফিজাহুল্লাহ। আমার দ্বীনে ফেরার সময়টাতে যখন অস্থির হয়ে পড়তাম, অশান্ত লাগতো, তখন হযরতের বয়ান শুনতাম ইউটিউবে সার্চ করে করে। তাঁর হৃদয়গ্রাহী বয়ান আমার অন্তরকে ঠান্ডা করে দিত, আমি দিল থেকে প্রশান্তি অনুভব করতাম। হযরতের বয়ান শুনে কাঁদিনি এমন সময় খুব কম গেছে। যখনই আমি পথ হারিয়ে ফেলার শঙ্কা বোধ করি, তখনই তাঁর বয়ান গুলো খুঁজে বের করে করে শুনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরতকে নেক হায়াত দান করুন। ৩. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লাহ)। প্রচন্ড মেধাবী এই মানুষটাকে দিল থেকে ভীষণ মহব্বত করি। এতটা বিনয়ী, নির্বিবাদী একজন আলেমে দ্বীন ছিলেন! সুবহানাল্লাহ! প্রত্যেক ঘরানার আলেমরাই হযরতকে পছন্দ করেন তার শান্ত, মিষ্ট আখলাকের জন্য। ৪. শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ। বাংলাদেশের মানুষের জন্য হযরত আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। কোন প্রচার-প্রচারণা নেই, কোন ঝগড়া-বিবাদে নেই, কোন হিংসা বিদ্বেষে নেই, নিরবে নিভৃতে যিনি কাজ করে যান ইসলামের জন্য। ইসলামের শিক্ষায় আলোকিত এই মানুষটি এগিয়ে আসেন দেশের প্রত্যেকটা বড় বড় দুর্যোগের মুহূর্তেই। অনেকটা আড়ালে থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের সমাজের মানুষের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ। আরো কিছু পছন্দের আলেম এবং দায়ীদের মধ্যে রয়েছেন- মুফতি জুবায়ের আহমেদ হাফি: -শায়েখ হারুন ইজহার হাফিজাহুল্লাহ- শায়েখ মাহফুজুর রহমান হাফিজাহুল্লাহ- মুফতি আফফান বিন শরফুদ্দিন হাফিজাহুল্লাহ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান হাফিজাহুল্লাহ - উস্তায নাহিদ হাসান শামসুল আরেফিন শক্তি ভাই-শিবলী মেহেদী ভাই উস্তায ইমরান রায়হান ভাই পছন্দের তালিকাটা অনেক দীর্ঘ। হয়তো এখানে উল্লেখ করেও শেষ করতে পারবো না। তবে আল্লাহ ওয়ালা আলেম এবং দায়ী ভাইদের পছন্দ করি ভীষণ। |
নিজের সম্পর্কে কিছু লিখুন |
আমি আল্লাহর এক গুনাহগার অধম বান্দা। ত্বলিবুল ইলম। পার্থিব জীবন নিয়ে যার কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। আগ্রহ নেই। খুব অল্প সময়ে মুদ্রার দুই পিঠই দেখে ফেলেছি আলহামদুলিল্লাহ। এক সময় চোখে অন্যরকম এক রঙিন চশমা ছিল। সেই চশমায় দেখা যেত রঙিন দুনিয়ার হাতছানি। খ্যাতি-যশ-অর্থ-সম্মান অভাব হয়তো হতো না কোনটারও। একসময় চমকে উঠলাম। রঙিন চশমা খুলে দেখি চারিদিকে শুধু ধূ ধূ বালি। শুধু মরীচিকা। মিথ্যে আশা জাগানিয়া স্বপ্ন। মাত্র কিছু সময়ের মহা আনন্দ। এরপর সব চুপ। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। সবশেষে নিক্ষেপ করা হয় অনন্ত জীবনে। যার কোন সীমারেখা নেই। চোখের রঙিন চশমাটাকে প্রচন্ড ঘৃণায় ভেঙে চুরে দূরে নিক্ষেপ করলাম। রঙিন দুনিয়ার মিথ্যে ও ক্ষণস্থায়ী লেবাস আগুনে পুড়ে ফেললাম।
অপশন দুইটা।
এক. সেই রঙিন দুনিয়ায় আমার রাজত্ব। ইচ্ছেমতো যশ-খ্যাতি-বাড়ি-গাড়ি-নারী। তবে শর্ত একটাই। এ জীবনটা হবে স্বল্প সময়ের। সময় ফুরিয়ে গেলে নিক্ষেপ করা হবে অগ্নিলাভায় অনন্তকালের জন্য। দুই. চশমা ছাড়া খালি চোখের এই দুনিয়ায় শুধু কষ্ট আর ধৈর্যের পরীক্ষা। সময় অসময়ে পরীক্ষার ছড়াছড়ি। অতঃপর মুক্তি। অনন্তকালের জন্য নিক্ষেপ করা হবে সেই প্রশান্তিদায়ক স্থানে। যেখানে শুধু সুখ আর সুখ। মৃত্যুর ভয় নেই। কোন কষ্ট নেই। কোন পরীক্ষা নেই। এ যাত্রা চিরজীবনের জন্য।
আরিফ আজাদ ভাই যথার্থ লিখেছেন, জীবনের দর্শন বদলানো মানে হলো জীবনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে জায়গা দেওয়া। তাঁকে ভালোবাসা এবং ভয় করা। সাধারণত কাউকে ভয় পেলে আমরা তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াই, দূরে দূরে থাকি। কিন্তু আল্লাহকে ভয় পাওয়াটা একেবারেই অন্য জিনিস! এই ভয় যতো বেশি প্রকট হয়, আমরা ততোই আল্লাহর কাছাকাছি চলে আসি..
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ওপর ভরসা করে দ্বিতীয় অপশনটা - বেছে নিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
একটা হালাল রুজি, দ্বীনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়া আর নেককার পরবর্তী প্রজন্ম গঠন করা যারা দ্বীনের খেদমতে কাজে আসবে এছাড়া দুনিয়ার এই ক্ষুদ্র জীবনে আর কোনো প্রত্যাশা নেই।
কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে জীবনের প্রতিটি সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিতনাময় পরিবেশে নিজেকে হেফাজত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। প্রবলভাবে মাহরাম এবং পর্দা গাইডলাইন মেনে চলার চেষ্টা করি।যখন পেরেশান হয়ে যাই, আতঙ্কিত হয়ে যায়, পথ হারানোর শঙ্কায় থাকি, পছন্দের আলেম-ওলামার সোহবতে চলে যাই। বস্তুত আলেম-ওলামার সোহবতে থাকতে পছন্দ করি।
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ইস্তিখারা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করি এবং করছি আলহামদুলিল্লাহ।
আমার অতীত নিয়ে একটা বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো-
উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই স্বপ্ন দেখতাম টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক হব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই সংবাদ উপস্থাপনার একটা কোর্স সম্পন্ন করে ফেলি। যেহেতু আবৃত্তি এবং বিতর্ক চর্চা করতাম, সে কারণে বিশুদ্ধ উচ্চারণ এবং বাচনভঙ্গি একটা এক্সট্রা সুবিধা দিয়েছিল। নজরে এসেছিলাম এটিএন বাংলার সাবেক একজন নিউজ প্রডিউসারের (বর্তমানে সম্ভবত গ্লোবাল টিভিতে কর্মরত)। প্রথম ইন্টার্নশিপ শুরু করি একটা অনলাইন মিডিয়ায়। এরপরে ডাক আসে বাংলা টিভিতে। সেখানে সর্বকনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে অডিশন দিয়ে নজরে আসার সৌভাগ্য হয়। এই ফাঁকে একটা অনলাইন রেডিও স্টেশনেও কাজ করেছি কিছুদিন।
এই সময়ে এসে উপলব্ধি করতে থাকি যে, মিডিয়ায় এসে আমার আমল কমে গেছে। আমি ট্রেডিশনাল মুসলিম হয়ে আছি। দ্বীন চর্চা হচ্ছে না। সেকুলার পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছি না। মাহরাম মানা তো দুষ্কর ছিল। বাংলা টিভির নিউজরুম ছেড়ে বিরতি দিয়েছিলাম কিছুদিন। এরপর জয়েন করি দেশবন্ধু টেলিভিশনে। সেখানেও দীর্ঘদিন সংবাদ পড়ার পর আর মন টেকেনি এই পরিবেশে..
আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। বিইউপিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কিছু দ্বীনি ভাইয়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেন। তাদের কাছাকাছি আসার পর নিজেকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করি। এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি দ্বীনি সেমিনারেও অংশগ্রহণ করি। একটা সময় পর মনে হয়, দ্বীনি ভাইদের মধ্যে যে সুরত এবং আখলাক, তা যদি নিজের মধ্যে ধারণ করতে
পারতামা তারা হালাল হারাম মেনে চলেন, মাহরাম মেনে চলেন, দ্বীনের ক্ষেত্রে একবিন্দুও ছাড় দেন না, কত সুন্দর তাদের বিনয়। কোন পেরেশানি নেই, ক্যারিয়ার নিয়ে উন্মাদনা নেই, আছে তাওয়াক্কল এবং আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর সন্তুষ্টি। এর চেয়ে উত্তম ঝর কোন জীবন হতে পারো মানসিকভাবে প্রশান্তি খুঁজে পেতে শুরু করি এই
সময়। পার্থিব জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকি। এবংআলহামদুলিল্লাহ নিজেকে দ্বীনের জন্য তৈরি করতে এবং পরিপূর্ণভাবে কুরআন এবং সুন্নাহ অনুসরণ করার ব্রত নিয়ে শুরু হয় আমার নতুন যাত্রা। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ।
মিডিয়া ছাড়ার পেছনে আমার যুক্তিগুলো ছিল এরকম-প্রথমত, বিনোদন নিউজ এর ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হারামকে প্রমোট করছে, মুসলিম প্রেজেন্টাররা হচ্ছে এর অংশীদার।
দ্বিতীয়ত, মিডিয়া আমাদের একমাত্র ভিজিবল সুন্নাহ (দাড়ি) বিমুখতাকে উৎসাহিত করছে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উম্মত হয়ে তার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার চেয়ে বড় কোন প্রাপ্তি আর হতে পারে না।
এর চেয়েও বড় বিষয়, মিডিয়ায় অবস্থান করে হারাম থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হয়ে যায়। যেন নিজের হাতে জ্বলন্ত কয়লা ধরে রাখার মত! পুরুষদের জন্য সংবাদ উপস্থাপনা হালাল বলেই জেনেছি। তবে সংবাদগুলো হতে হবে যৌক্তিক এবং হালাল-হারামের পার্থক্য মেনে। কিন্তু যদি আপনি হারাম কে প্রমোট করছে এমন নিউজ করেন, তা অবশ্যই হারাম। এবং এর অংশীদার হওয়ার কারণে অবশ্যই স্রষ্টার কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে।
তবে এই সেক্টরে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রেজেন্টারদের ক্লিন সেভকরে নিউজরুমে ঢুকতে হয়। একবার ভেবে দেখুন, হাশরের কঠিন ময়দানে একটু সুপারিশের জন্য মানুষ দৌড়াদৌড়ি করবে নবীদের দ্বারে দ্বারে। সেদিন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া কারও সাহস হবে না আল্লাহর দরবারে সুপারিশের জন্য যেতে। যেই নবী (সা.) আমাদের না দেখে আমাদেরকে এত পরিমাণে ভালোবাসেন, কিয়ামতের কঠিন সময়ে যখন তিনি ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলতে থাকবেন, সেই নবীর সুন্নাহ দাড়িতে খুর লাগানোর দুঃসাহস আমরা দেখাই কী করে?আর নারী প্রেজেন্টার নিয়োগের মাধ্যমে তো চ্যানেলগুলো বড় ধরনের পাপের অংশীদার হচ্ছে। নারীরা পর্দার ফায়সালা না মেনে কোটি কোটি নন মাহরামের সামনে নিজেদের প্রদর্শন করছে।
আল্লাহু আকবর। ছেড়ে দেয়ার নিয়্যাত করি।
এরপর অন্তর থেকে প্রশান্তি অনুভব করি।
কানে বারবার একটা কথাই বাজে, 'তুমি আল্লাহর জন্য কোন কিছু ছেড়ে দাও, আল্লাহ এর থেকেও উত্তম প্রতিদান তোমাকে দিয়ে দেবেন।'
হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি'মাল ওয়াকীল, নি'মাল মাওলা ওয়া নি'মান নাছীর সেকুলার মিডিয়ায় নিউজ পড়া ছেড়েছি অনেকদিন। ছোটবেলা থেকে তিল তিল করে জমানো প্যাশনটাকে বিসর্জন দিয়েছি মুহূর্তেই। তবে এখন আর আফসোস হয় না। শয়তান মনের মধ্যে সংশয়ের ঝড় তোলে প্রায়ই। তখন মনে পড়ে মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) এর কথা। আর মনে পড়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটা হাদিস, "আল্লাহ তায়ালার ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।" এমন একজনকে জীবনে প্রত্যাশা করি, যার সাথে আমার সম্পর্ক হবে জান্নাত অবধি..
আর দুনিয়ায় এমন একটা জীবন গঠন করতে চাই- যেন মালাকুল মাউত এসে বলেন, হে প্রশান্ত আত্মা! বেরিয়ে এসো তোমার রবের দিকে সন্তুষ্ট চিত্তে..
আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে তিনি আমাকে হেদায়েতের পথে চলার তাওফিক দিয়েছেন। যদিও আমি নিজেকে দ্বীনদার বলে মনে করি না, তবে সর্বদা চেষ্টা করি ইসলামের প্রতিটি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই পথেই অটল থাকতে চাই, ইন শা আল্লাহ। দ্বীনের ব্যাপারে কোনো আপস করতে চাই না, বরং যা কিছু করবো, তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়-এটাই আমার একমাত্র প্রচেষ্টা।
জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো একজন দ্বীনদার ও হৃদয়বান জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এক সুন্দর ইসলামী জীবন গঠন করা। এমন একজন সাথী চাই, যিনি দ্বীনের পথে আমার জন্য সহযাত্রী হবেন এবং একসাথে এই পথ চলতে সাহায্য করবেন। আমি নিজেও চাই, তার জন্য একজন উত্তম জীবনসঙ্গী হতে। একসঙ্গে উমরাহ করার স্বপ্ন আছে, ইন শা আল্লাহ, এবং প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের সম্পর্ক জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
ইসলামের জ্ঞান অর্জনের প্রচণ্ড ইচ্ছা রয়েছে এবং আমৃত্যু তালিবে ইলম (জ্ঞান অন্বেষণকারী) হিসেবে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে উম্মাহর জন্য দ্বীনের দাঈ হওয়ার প্রত্যাশা আছে। তাই এমন একজন জীবনসঙ্গী চাই, যিনি এই পথ চলায় আমাকে উৎসাহিত করবেন, বাধা নন, বরং সহযোগী হবেন।
আমি আল্লাহর একজন গুনাহগার বান্দা। এমন একজনকে প্রত্যাশা করি, যিনি আমার দ্বীন পালনে সহযোগিতা করবেন, আমার জান্নাতের সঙ্গী হবেন, দুনিয়াতে হবেন আমার কুররাতু আইয়ুন, আমার মানসিক প্রশান্তির জায়গা। অনেক আশা নিয়ে এমন একজন জীবন সঙ্গিনীর প্রত্যাশা করে জায়নামাজে চোখের অশ্রু ফেলি। তাই এই অধমকে বিবেচনা করবার আগে, দয়া করে ভালো করে চিন্তা ভাবনা এবং ইস্তিখারা করে সিদ্ধান্ত নেবেন ইন-শা-আল্লাহ... |
কোন মাজহাব অনুসরণ করেন? |
হানাফি |
নজরের হেফাজত করেন? (Required) |
হ্যা |
দ্বীনি ফিউচার প্ল্যন কি আপনার? |
ইসলামের জ্ঞান অর্জনের প্রচণ্ড ইচ্ছা রয়েছে এবং আমৃত্যু তালিবে ইলম (জ্ঞান অন্বেষণকারী) হিসেবে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে উম্মাহর জন্য দ্বীনের দাঈ হওয়ার প্রত্যাশা আছে। আমরা পুরো স্বপ্ন ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঘিরে।সন্তানকে গড়ে তুলতে চাই রাসুলুল্লাহ (সা:) এর আদর্শ অনুযায়ী । তৈরি করতে চাই মুসআব ইবনে উমায়ের, হানজালা কিংবা সাদ ইবনে মুআজ (রা:) এর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে। নিজের আশেপাশে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে দিনের ২৪ ঘন্টার প্রতিটি সেকেন্ড কাটবে কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী ইন-শা-আল্লাহ । |
অবসর সময় কিভাবে কাটান? (Required) |
বই পড়ে। সাধারণত মাসে অন্তত চারটি নতুন বই পড়ার চেষ্টা থাকে। কখনো পারি, কখনো পারিনা। তবে বই পড়তে ভীষণ পছন্দ করি। |
বাড়িতে কি কি দায়িত্ব আপনি পালন করে থাকেন? (Required) |
বেশিরভাগ সময়ই ঢাকাতেই থাকা হয়। তবে যেখানে প্রয়োজন পড়ে চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। |